বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রণিধানযোগ্য কোনো গবেষণা
এখন পর্যন্ত নেই, যা থেকে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে মাসিকের আগে নারী অসুস্থ হতে
পারে। তবে কিছু কিছু ইংগিত মিলেছে, যা থেকে বলা যায় যে এমনটা হতে পারে।
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পিরিয়ডের
আগে বা মাঝের কোনো সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ওঠা-নামা করতে পারে। আবার
দীর্ঘমেয়াদী কোনো পুরনো রোগ থাকলে সেটা হয়ত মাসিকের সময়ই বেড়ে যেতে পারে। তাতে মনে
হতে পারে নতুন কোনো অসুখ বুঝি শরীরে বাসা বেঁধেছে।
মাসিক শুরু হওয়ার ঠিক আগে আগে অনেক নারী এমন
কিছু উপসর্গ অনুভব করার কথা বলেছেন, যেগুলো অনেকটা ফ্লুর মত। জ্বর জ্বর ভাব, গা
ব্যথা বা বিষণ্নতা দেখা যায় তাদের।
এনওয়াইইউ ল্যানগোন হেলথের গাইনোকলজিস্ট
তারানেহ শিরাজিয়ান বললেন, পিরিয়ডের সময় ওই ফ্লুর মত উপসর্গ কোনো জীবাণুর কারণে হয়
না। এ সময় জরায়ু সংকুচিত হয়, কোষের মৃত্যু ঘটে। মাসিকের সময় শরীরে যে স্বাভাবিক
প্রদাহ হয়, তার বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটাই ফ্লুর
উপসর্গের মত মনে হয়।
অবশ্য হরমোনের ওঠানামাও এ ধরনের উপসর্গের কারণ
হতে পারে বলে জানালেন এই চিকিৎসক।
শরীরে ডিম্বাণু নিঃসৃত হওয়ার ঠিক আগে লিউটিনাইজিং হরমোন বা এলএইচ বেড়ে যায় এবং পিরিয়ড
শুরু হলে দ্রুত নেমে যায়। এলএইচের এই পরিবর্তনের কারণে
ক্লান্তি, ঢেকুর ওঠা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে।
ডাক্তার শিরাজিয়ান বলেন, “কোনো কোনো নারীর
বেলায় প্রতি পিরিয়ডে, প্রতি মাসে এসব উপসর্গ প্রবলভাবে দেখা দিতে পারে।”
পিরিয়ড ট্র্যাকিং অ্যাপ ক্লু এবং গবেষকদের এক
যৌথ জরিপে আরো কিছু জটিলতার তথ্য জানা গেছে। যেমন- অন্ত্রের প্রদাহ, মৃগীরোগ বা
অটোইমিউন ডিজঅর্ডারে ভুগছেন- এমন নারীদের ক্ষেত্রে এসব রোগের উপসর্গ ডিম্বাণু
নিঃসৃত হওয়ার সময় বেড়ে যেতে পারে। সপ্তাহখানেক পর পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মাসিকের
সময় আবার বেড়ে যেতে পারে।
জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের
মাইক্রোবায়োলজিস্ট সাবরা ক্লেইন বলেন, “এসব আসলে পিরিয়ডের দিনগুলোতে হরমোনের
মাত্রায় তারতম্য আর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ফল।”
আরেক গবেষণা বলছে, হাঁপানিতে ভোগা নারীদের ১৯
থেকে ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ঠিক আগে আগে বা ওই দিনগুলোতে ঘন ঘন বা
তুলনামূলক প্রবলভাবে অ্যাজমার অ্যাটাক হতে দেখা গেছে। চিকিৎসকরা একে বলেন পেরিমেন্সট্রুয়াল
অ্যাজমা।
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস নামের স্নায়ুরোগে
ভুগছেন- এমন নারীদেরও পিরিয়ডের সময় অসুস্থতা বেড়ে যেতে পারে বলে ছোট কিছু গবেষণায়
দেখা গেছে। অটোইমিউন রোগ লুপুসে ভোগা রোগীরা মাসিকের দিনে প্রচণ্ড গায়ে ব্যথা অনুভব
করার পাশাপাশি ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।
সন্তান ধারণের জন্য নারীর শরীরে প্রতি মাসে ডিম্বাণু তৈরি
হয় এবং মাসিকের সময় তা ডিম্বাধার থেকে বেরিয়ে আসে।
বস্টনের ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেনস হসপিটালের
গাইনোকোলজিস্ট কিম্বার্লি কিইফি স্মিথ বলেন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্বাভাবিক
প্রবণতা হল, শরীরে অস্বাভাবিক কিছু পেলে সেটাকে মেরে ফেলতে বা বের করে দিতে চায়। ডিম্বাণু
নিষিক্ত হলে ভ্রুণ যেন আক্রান্ত না হয়, সেজন্য মাসিকের সময়টায় স্বাভাবিক রোগ
প্রতিরোধ ব্যবস্থার কিছু অংশ নিষ্ক্রিয় থাকে।
মাসিক চলাকালে ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন ও
প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণ করে। তাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশ
বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে গর্ভধারণের সময়টায় প্রোজেস্টেরন হরমোনের
মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখতে পারে।
তবে ডা. কিইফি স্মিথ বলছেন, মাসিকের সময় রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি শুধু ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন দিয়ে
ব্যাখ্যা করা যায় না।
যারা কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য হরমোনের ওষুধ নিচ্ছেন
অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণ করছেন, তাদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম।
নারী তার মাসিকের সময় কতটুকু অসুস্থ বোধ করতে
পারেন তা নিয়ে কোনো উপযুক্ত তথ্য ছাড়া বিজ্ঞানীরা বিশেষ কোনো দিক নির্দেশনা দিতে
অপারগ।
ক্লেইন বলেন, “আপনার সর্দি লাগবে, নাকি অন্য
কোনো সংক্রমণ হবে তা আগে থেকে বলা আমার পক্ষে সত্যিই মুশকিল। কারণ এত বিষদ গবেষণা
এখনও হাতে নেই।”
তবে নারী যদি দীর্ঘদিন ধরে বারবার অসুস্থবোধ করেন মাসিকের
দিনে, তবে তা অবহেলা করার সুযোগ নেই।
ক্লেইন বলেন, “পিরিয়ডে অসুস্থবোধ করলে তা নিরাময় করে শরীরকে
সুস্থ রাখতে হবে।”
“অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং
২০ মিনিট ধরে হাত ধুতে হবে। প্রত্যেক নারী নিজেই তার শরীরকে সবচেয়ে ভালোভাবে জানেন।”