ক্যাটাগরি

সুরমার পানি বেড়ে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

এ ছাড়া প্লাবিত হওয়া সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট,
কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও পানি
বাড়ছে। উজানের ঢল আর বৃষ্টি না থামায় এমন পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন।

সুরমা নদীর পানি বাড়তে থাকায় তীরবর্তী সিলেট
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে সোমবার সকাল থেকে। নগরীর শাহজালাল উপশহর,
সোবহানীঘাট, কালীঘাট, চাঁদনীঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া,
মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী
আসিফ আহমদ বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার শুন্য
দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। তাই তীর উপচে নদী তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকায়
পানি ঢুকছে।

“এ ছাড়া সুরমা নদীর পানি সীমান্তবর্তী কানাইঘাট
পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের
অমলসিদ পয়েন্টে ১৪৮ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে শুন্য দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে।

সারি নদির পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১৮
সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী।

এদিকে মঙ্গলবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ
কেন্দ্রের এক তথ্যে বলা হয়েছে, “আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও
সুনমাগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।”   

নগরীর কলাপাড়ার বাসিন্দা রশিদ আহমদ বলেন,
“হঠাৎ পানি উঠে যাওয়ায় আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে, রাতে কেউ
ঘুমায়নি। জরুরি জিনিসপত্র অন্য জায়গায় সরাতে হচ্ছে।”

নগরীর ছড়ারপাড়ের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন,
“নগরীর এই পরিস্থিতির জন্য বৃষ্টি আর উজানের ঢলের ভূমিকা আছে সত্য। কিন্তু সুরমা নদীর
নাব্যতা সংকট, নগরীর ড্রেন, নালা, ছড়া পরিষ্কার না থাকা, ময়লা-আবর্জনা ফেলে এগুলোর
গতিপথ আটকে দেওয়া, কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাব এসবও কিন্তু এই দুর্ভোগের জন্য
দায়ী।”

সিলেট সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, মহানগরী
এলাকায় প্রায় এক হাজার ১০০ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের পাশের
রয়েছে ৫৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৭০-৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২২০ কোটি টাকা।
বাকি কাজ শেষ করতে আরও ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে এসব কাজ
শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর
আজিজুর রহমান বলেন, “পরিকল্পনা করেই ড্রেন করা হয়েছে। রাস্তা থেকে ড্রেনে পানি নিষ্কাশনের
ছিদ্র বা ছোট পথে অনেক সময় আবর্জনায় আটকে যায়। এতে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয় না। আর অতি
বৃষ্টি হলে এমনিতে পানি নামতে সময় লাগে। ওই পথগুলো বড় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

“চলমান ড্রেনের সংস্কার কাজ ৭০-৭৫ ভাগ শেষ
হয়েছে। শতভাগ কাজ সম্পন্ন হলে আর এ সমস্যা থাকবে না।”

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ
সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ১৮ মে পর‌্যন্ত সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমবে। তবে ভারতে বৃষ্টি হচ্ছে, এ কারণে ঢল নামছে। ফলে নদ-নদীর পানি
বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন,
পাহাড়ি ও ভারী বৃষ্টির কারণে সিলেটের ছয়টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বন্যা
পরিস্থিতির দিকে আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় সহায়তা পাঠানো
হয়েছে। প্রয়োজনে আরও পাঠানো হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বন্যার্ত মানুষের সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসন
কাজ করছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন:


সুরমা উপচে এবার সুনামগঞ্জ শহর প্লাবিত
 

সুরমা উপচে পানি নগরীতে