আলো-অন্ধকারে, সংগীতে ও নীরবতায়,
আনন্দ আর বেদনায় জীবনের সবটাই যেন চিত্রিত
হল মমতা শঙ্করের ‘অমৃতস্য পুত্র’ নৃত্যনাট্যে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের উদ্যোগে থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রোববার সন্ধ্যায় নৃত্য পরিবেশন করেন মমতা শংকর ও তার দলের শিল্পীরা। ছবি: সুমন বাবু
বিমোহিত দর্শক করতালির তরঙ্গে
জানিয়ে দিল মুগ্ধতা। এ যেন ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে. যাবে না ফিরে’। তবু সময়ের
মাপে শেষ হয় সব আয়োজন। ফিরতে হয়, শুধু রেশ রয়ে যায়।
রোববার রাতে চট্টগ্রামের
থিয়েটার ইন্সটিটিউট মিলনায়তন থেকে এমনই মুগ্ধতা মনে নিয়ে ফিরলেন দর্শকরা।
কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী উদয়
শঙ্কর-অমলা শঙ্কর দম্পতির মেয়ে মমতা শঙ্কর জানালেন ৪৩ বছর পর তার চট্টগ্রামে আসার কথা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনে
তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই নৃত্য সন্ধ্যার আয়োজন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের উদ্যোগে থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রোববার সন্ধ্যায় নৃত্য পরিবেশন করেন মমতা শংকর ও তার দলের শিল্পীরা। ছবি: সুমন বাবু
ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন এবং
ইনডিয়ান কাউন্সিল ফর কারচারাল রিলেশনসের সহযোগিতায় চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশন
এ আয়োজন করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার
মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু বাংলার ফল’ দিয়ে শুরু হয় প্রথম পর্বের পরিবেশনা।
এরপর একে একে ‘ধিতাং ধিতাং
বোলে’, ‘আলোর অমল কমল খানি’ ছুঁয়ে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের সেই অমর সৃষ্টি ‘শোনো একটি
মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি’ গানের সাথে যখন শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন
করছিলেন, তখন পুরো মিলনায়তন তালে তালে তালিতে জানিয়ে দিল প্রাণের আবেগ।
মমতা শঙ্করের স্বামী চন্দ্রোদয়
ঘোষ পরিবেশনায় সূত্র ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “তখন আমরা খুব ছোট। বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা-
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, আমাদের
আলোড়িত করেছিল দারুণভাবে।”
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে
চট্টগ্রামের সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “কৃতজ্ঞচিত্তে
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত এবং শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধীর অবদান আমরা স্বীকার করি।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সেই মৈত্রীর বন্ধন অটুট থাকবে ভবিষ্যতেও।”
এরপর পরিবেশিত হয় নৃত্যনাট্য
‘অমৃতস্য পুত্র’।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের উদ্যোগে থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রোববার সন্ধ্যায় নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। ছবি: সুমন বাবু
চন্দ্রোদয় ঘোষ সঞ্চালনায়
জানিয়ে দেন, কিসের সন্ধান চলে মানুষের জীবন জুড়ে।
মঞ্চে শব্দ আর ছন্দে, আলোর
খেলায় শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন ‘আত্মার মানব দেহে প্রবেশের’ অপার্থিব মুহূর্ত। জন্ম হয়
মানুষের।
মায়ের অপত্য স্নেহে সে শিশু
বেড়ে ওঠে। শৈশব কাটে তার আনন্দ খেলায়। যৌবনের উচ্ছ্বলতায় যেন ফুলের মত সূর্য পানে চেয়ে
থাকে আলোর ছোঁয়া পেতে।
বর্ণিল নাচে-গানে মঞ্চে মূর্ত
হয়ে ওঠে জীবনের জয়গান।
কিন্তু এরপর জীবনে ভর করে
চাওয়া-পাওয়ার হিসাব। সেই চাহিদা মেটাতে গিয়ে সৃষ্টি হয় হিংসা, দ্বেষের। আত্মার সাথে
আত্মার দূরত্ব তৈরি হয়। বিভেদ নেমে আসে আশৈশব সাথীদের মাঝে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের উদ্যোগে থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রোববার সন্ধ্যায় নৃত্য পরিবেশন করেন মমতা শংকর ও তার দলের শিল্পীরা। ছবি: সুমন বাবু
মঞ্চের সব রঙ মুছে যায়। বর্ণিল
সজ্জা পাল্টে যায় আঁধারে। কালো আর ধ্বংসের বিস্তার ছেয়ে ফেলে পুরো আয়োজন। বাতাসে ভেসে
আসে কান্না আর আর্তনাদ।
বিভেদ আর মৃত্যু মনে করিয়ে
দেয় জীবনে হারানোর বেদনা। উচ্চারিত হয় সেই প্রশ্ন- মৃত্যু আর ধ্বংসই কী গন্তব্য?
মানুষ সৃষ্টিকর্তার পানে
হাত বাড়ায়। নিজের আত্মার কাছে আশ্রয় খোঁজে। সন্ধান করে অমৃতের। তাতেই শান্তি, তাতেই
মুক্তি!
আলোকের ঝরনা ধারায় যখন অবিনাশী
প্রাণ জেগে ওঠে, তেমন এক অপার্থিব ক্ষণে শেষ হয় পরিবেশনা, জেগে ওঠে অমৃতের পুত্ররা।
পুরো মিলনায়তন করতালিতে ভাসিয়ে
দেয় শিল্পীদের।
অনুভূতি প্রকাশের অনুরোধে
মমত শঙ্কর বলেন, “এখানে এসে আমার যা অনুভূতি তা আমাদের পারফরম্যান্সেই তুলে ধরেছি।”
আর দর্শকের কাছে মমতা শঙ্কর
ড্যান্স কোম্পানির ২০ সদস্যের এ পরিবেশনা এক প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা।
সকলের হয়ে চট্টগ্রামে ভারতের
সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি ফুল তুলে দেন মমতা শঙ্করের হাতে।