ক্যাটাগরি

সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়ল

নতুন দর অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, যা এতদিন
১৪০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা
হয়েছে। ৫ লিটারের বোতলের দাম হবে ৯৮৫ টাকা।

আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে
ভোজ্যতেলের দাম ঘোষণা করা হলেও এবার মিল মালিকরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেরাই
মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন।

ঈদের পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড
বনস্পতি ম্যানুফাচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বার্তায় ভোজ্যতেলের নতুন দর ঘোষণা করা
হয়।

নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী, পরিশোধিত পাম সুপার তেল প্রতি লিটারের
সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ১৭২ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৩০ টাকা।

সেই হিসাবে পাম তেলের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ। আর সয়াবিনের দাম খুচরায়
বেড়েছে ২৮ শতাংশ, বোতলজাতের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর  পর সয়াবিনসহ ভোজ্য তেলের দর বিশ্ববাজারে চড়তে
থাকায় দেশের ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ানোর পক্ষে বলছিলেন।

এর মধ্যে রোজার ঈদের আগে হঠাৎ করেই খুচরা বাজার থেকে সয়াবিন তেল
উধাও হয়ে যায়, যদিও আমদানিতে কোনো সঙ্কট ছিল না। 

কোথাও মিলছে না সয়াবিন তেল, হঠাৎ ‘উধাও’

খুচরায় সঙ্কটের মধ্যে ২ কোটি লিটার তেলভরতি জাহাজ বন্দরে

ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাব ভারতে রান্নায়

সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেলের দাম
নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল
১৪৩ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে
মিল মালিকরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গেলেও সরকার সায় দেয়নি। গত
মার্চের মাঝামাঝিতে তেলের আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পর
ঈদের আগে লিটারে ৭ টাকা করে দাম কমানো হয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে এপ্রিল ও মে মাসে ধীরে ধীরে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে
দিতে থাকেন মিল মালিকরা। দাম বৃদ্ধির আশায় ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারাও তেলের মজুদ
শুরু করেন। এসব ঘটনা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ধরা পড়ে।

কারওয়ান বাজারের একটি মুদি দোকানে বিভিন্ন ধরনের বোতলে খোলা সয়াবিন তেল ভরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

কারওয়ান বাজারের একটি মুদি দোকানে বিভিন্ন ধরনের বোতলে খোলা সয়াবিন তেল ভরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

মিল মালিকদের ভাষ্য, বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের নিয়মিত মূল্য প্রতিটন
১২০০ ডলার থেকে বেড়ে ১৮০০ ডলারে উঠেছে। পরে সেটা কিছুটা কমে ১৬০০ ডলারে থিতু
হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তসলিম মূল্য বৃদ্ধির নতুন
সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিল
মালিকরা বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে আলাপ করেই তেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী
কাল থেকে এই মূল্য কার্যকর হবে।”

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে
দাম বেড়েছে সেটা আমরাও বুঝতে পারছি। ভারতে লিটার ২০৫ টাকা করেছে। ইংল্যান্ডে তেলের
বিক্রি সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। জার্মানে আরও খারাপ অবস্থা। ব্রাজিল সবচেয়ে বড়
সরবরাহকারী, তারাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে,
বিশ্বব্যাপী সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এখন বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্তরের
ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এখন দেখা যাক তারা কী করে।”

“মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরাও একটা যৌক্তিক দাম
ঠিক করে দেওয়ার চিন্তা করছি,” বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত
করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিল
মালিকরা আমাদেরকে জানিয়েছে। তারা কাল থেকে কার্যকর করবে। দীর্ঘ দেড় মাস বাড়ানো
হয়নি। এর মধ্যে দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাদের অনেক লস হচ্ছিল। লস হলে তো তারা
মার্কেটে তেল দেবে না। আগামী সপ্তাহে আমরা হিসাব করে দেখবো, তারা সঠিকভাবে দাম
বাড়ালো কি না?

বাজারে তেল সঙ্কট সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা
সরবরাহ সঙ্কটের জন্য নিয়মিত অ্যাকশন নিচ্ছি। অবৈধ মজুদের জন্য ভোক্তা অধিকার থেকে
নিয়েমিত অভিযান করা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। আশা করছি, মূল্য সমন্বয়ের ফলে
পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”